শতবর্ষে আমার স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাটুরিয়াঃ
বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল প্রতিষ্ঠার পেছনে আছে হ্নদয়বিদারক এক ইতিহাস। এই ইতিহাস জানতে হলে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে।জানতে হবে বালিয়াটীর ইতিহাস।

                                    স্কুলের পূর্বের ছবি
বালিয়াটী অনেক আগে থেকেই ছিল অত্র অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। কারণ অত্র অঞ্চলের জমিদার রায় বাহাদুর চৌধুরী পরিবারের আবাস ছিলো এই বালিয়াটী গ্রাম। এখনো সাটুরিয়া উপজেলার কেন্দ্রবিন্দু এই বালিয়াটী গ্রাম। কারণ উপজেলার প্রশাসনিক অফিস এই বালিয়াটী গ্রামেই। এই জমিদার পরিবারের ছেলে ছিলো উপেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। জমিদার হরেন্দ্রকুমার রায় চৌধুরীর ছেলে। আশেপাশে কোন স্কুল না থাকলেও উপেন্দ্র কলেজের পাঠ চুকিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেত যান। ১৯১৭/১৮ তে বিলেত থেকে ফেরার পর বাবার কাছে করেন অদ্ভূত এক আবদার।আশেপাশের গ্রামে কোন স্কুল নেই। তাই বালিয়াটীতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য বায়না ধরেন। যাতে এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষালাভ করতে পারে। কিন্তু হরেন্দ্রকুমার ছেলের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন। স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে, জনগণ শিক্ষিত হলে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠবে। তখন আর তাদের শোষণ করা যাবে না। তাই তিনি ছেলের প্রস্তাব মেনে নিতে পারেন নি। অথচ এই পরিবারেরই সদস্য কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ১৮৭২ সালেই পুরান ঢাকায় তার বাবা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে জগন্নাথ স্কুল(বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন। কে.এল. জুবিলী হাইস্কুলও তার প্রতিষ্ঠা করা। অভিমানে উপেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী নিজের রুমে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।

                                উপেন্দ্রকুমার রায় চৌধুরী
পুত্র হারিয়ে হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী পুত্রের স্বপ্ন পূরণে মনোনিবেশ করেন।১৯১৯ সালের ১৬ ই জানুয়ারী তার বাবা ঈশ্বরচন্দ্র রায় চৌধুরীর নামে স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শুরুতে এই স্কুল ছিল হাই ইংলিশ স্কুল। এর প্রথম প্রধান শিক্ষক একজন ইংরেজ ছিলেন বলে জানা যায়। প্রতিষ্ঠার একবছর পরই ১৯২০ সালে স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী বিপুল অর্থ ব্যয়ে ১৯২০-২২ সাল ২ বছর সময়ে মুল স্কুল ভবনটি তৈরী করেন। স্কুলের নামে ১৭ একর জমি লিখে দেন।

                                 হরেন্দ্রকুমার রায় চৌধুরী

এরপর থেকেই বালিয়াটীসহ আশেপাশের এলাকার জনগোষ্ঠির শিক্ষাগ্রহণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখে চলেছে এই স্কুল। বর্তমানে মানিকগঞ্জ, ঢাকা ও টাংগাইল তিন জেলার আনুমানিক ৩৫টি গ্রামের ছেলেমেয়ে এই স্কুলে পড়াশোনা করে। এই স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২০০। প্রতিবছর দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এই স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীই পড়াশোনা শেষ করে দেশের উন্নয়নে নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এবং অনেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। ১৯১৯ থেকে ২০১৯। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এই স্কুল তার গৌরবময় জীবনের এক শতাব্দী পাড়ি দিয়েছে। এভাবে আরো হাজারো শতাব্দী পাড়ি দিবে আমাদের প্রাণের স্কুল। এই আমাদের একান্ত কামনা।

লেখকঃ এস.কে.এম. হেদায়েত উল্লাহ, সাবেক শিক্ষার্থী, বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়।

আরো পড়ুুন