জালে বা পলো নিয়ে মাছ ধরার
জন্য যেতো এ শৌশুমে। আর আমেজ নিয়ে হাকঢাক পিটিয়ে দল বেধে সবাই বের হয়ে
যেতাম মাছ শিকারে। অনেক আনন্দ উৎসব হত সেকালের এ দলবদ্ধ মাছ শিকারে। সকালে মাছ শিকার করতে গিয়ে অনেক সময় সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
অনেক মজা করে গান গাইতে গাইতে চলতাম মাছ ধরতে। বাবা মাকে খুশি করার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা ও পরিশ্রম করতাম মাছ ধরতে। বিভিন্ন ডোবানালায় বাচ্চাদের গামছা দিয়ে মাছ ধরারদৃশ্য চোখে পরত।
যেত। প্রায় শুকনো জলাশয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার ছোট–বড় মানুষ পলো, বাওয়া, উচা ইত্যাদি দিয়ে এমনকি খালি হাতেও মাছ ধরার দৃশ্য যতেষ্ট চোখে পড়তো। এটা যেন পরিণত হতো গ্রামীণ উৎসবে।
উপজেলার ঐতিহ্যময় ধলেশ্বরী নামক নদীটি মাছ শিকারের জন্য বিশিষভাবে খ্যাত। প্রায় শত বছর ধরেই এমন সময় আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মাছ ধরতে
আসতো এখানে। কারো জাল, পলো, বাওয়া ইত্যাদিতে রুই–কাতলা, বোয়াল, শোল ইত্যাদি মাছ ধরা পড়লেই একসঙ্গে সবাই আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠতেন। তখন তাদের মনে আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায় আনন্দের ঢেউ। তাদের এই আনন্দ–উৎসব দেখা বা উপভোগ করার জন্য দূর–দূরান্ত থেকেও আসত অনেক লোকজন। এতে শিশু–কিশোররা খুব বেশি আনন্দ পেত।
জন্য স্থানীয় ভাষায় ডালা স্বরুপ দিত। এতেও তারা আরো বেশি আনন্দ পেত। মাছ ধরার সময় নানা ধরনের গানও তারা সুর করে গাইত। এই আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠতো এলাকার আশপাশের গ্রামগুলোও। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য স্থানের লোকেরাও এমন আনন্দে কমবেশি মেতে ওঠত। অনেকে এমন দিনগুলোর জন্য অধির আগ্রহেও অপেক্ষা
করতো। আজ সেসব শুধুই স্মৃতি। সেসব কথা মনে করতেই চোখে জল এসে যায়। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সে স্মৃতিময় দিনগুলোতে।
প্রধান কারণ-জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ–নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল–বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা–নালা পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের অবাধ চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো।
সচিব বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।
২০১৭।