নান্দেশ্বরীর ৪২ মণ ওজনের সম্রাট কে দেখতে ভিড়

হাসান ফয়জী: সোমবারে জন্ম তাই নাম রাখা হয়েছে সম্রাট। ইতিমধ্যে তার নাম ছড়িয়েছে পড়েছে আশে পাশের গ্রামে। লোকজনও ছুটে আসছেন এক নজরে দেখার জন্য। মানুষ সকাল বিকাল ভীড় করছেন । সেলফি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। আবার সেই ছবি ফেসবুকে আপ করে হাফ ছাড়ছেন অনেকেই। কোন সিনোমর নায়ক নয়, কোন প্রত্নতত্ত্ব বা কোন রাজপ্রাসাদের স্থাপনার কথাও বলছি না। ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী গ্রামের এম কুদ্দুছ মিয়ার একটি ষাঁড় লালন- পালন করে বড় করেছেন, যার বর্তমান ওজন সাড়ে ৪২ মণ এবং নাম রেখেছেন সম্রাট। 

এম কুদ্দুছ বাড়ী ধামরাই ও সাটুরিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম নান্দেশ্বরী গ্রামে। তিনি তার পালের একটি ষাঁড় ২ বছর ৬ মাস দেশী পদ্বতিতে লালন – পালন করে বড় করেছেন।  যা পবিত্র ঈদুল আজহার হাটে বিক্রি করবেন।  সম্রাট কে দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত মানুষ।  সম্রাটের ক্ষ্যাতি শুনে অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না।  কিন্তু যখন নিজ চোখে দেখে এবং প্রাণী সম্পদ অফিসের ডাক্তারদের ওজন পরিমাপের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দেখে বিশ্বাস করছেন।

মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুছ এর পুত্র সেলিম বলেন, সম্রাটের মা ওর ১৭ দিন বয়সে মারা যায়, খুব কষ্টে আমি আমার পরিবারের ৪ জন সদস্য ও ডাক্তারদের সহযোগীতায় লালন- পালন করতে থাকি। ২ বছর আগে সিদ্ধান্ত নেই সম্রাট কে ২০১৮ সনের ঈদুল আজহার হাটে বিক্রি করার।

এম এ কুদ্দুছ এর বাড়ী ধামরাই ও সাটুরিয়া উপজেলার সিমান্তবর্তী এলকায় হওয়াতে আমরা সাটুরিয়া উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসের ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে সম্রাট নামের এ ষাঁড়টি বড় করতে থাকি।

সোমবার (৬ আগষ্ট) সকালে কুদ্দুছ এর বাড়ী গিয়ে দেখা যায়, সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেনারি সার্জন ডা. মো. সেলিম জাহান সম্রাট কে দেখতে এসেছেন। কথা হয় তার সাথে, তিনি বলেন, আমি সাটুরিয়া তে যোগদান করার আগে থেকেই এ ষাঁড়টি আমার অফিসের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন।  সম্রাটের বর্তমান ওজন সাড়ে ৪২ মণ।  ২ বছর ৬ মাসের সম্রাটের ৪ টি দাত, উচ্চতা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি, লম্বা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি, ১ হাজার ৭ শত ২ কেজি অর্থাৎ সাড়ে ৪২ মণ।  ঈদের সামনে আরো ওজন বাড়বে বলে তিনি দাবী করেন।

এম এক কুদ্দুছ বলেন, সখের বসেই বাণিজ্যিকভাবে গরু লালন পালন করে থাকি। তবে এর আগে পার্শবর্তী উপজেলা সাটুরিয়ায় পর পর ৩ বছর বেশী ওজনের গরু বিক্রির বিষয়টি দেখে আমি উৎসাহিত হই গরু মোটাতাজা করনের।  ২  বছর ৬ মাস এ সম্রাট কে লালন পালন করে আজকে ৪২ মণ ওজনের পরিণত করেছি।

কুদ্দুছ বলেন, সম্রাট কে প্রতিদিন কাচা ঘাস, গমের ভূসি, শুকনা খড়, ভুট্টা, ধান ও গম ভাঙ্গা, ছোলা, চিড়া, আখের গুর, মালটা, কলা, পেয়ারা, মিষ্টি লাউ, নালী খাওয়ানো হয়। আর ঔষধের মধ্যে ডিসিপি লবন খাওয়েছি।

সম্রাটের চিকিৎসক সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেনারি সার্জন ডা. মো. সেলিম জাহান বলেন, এ ষাঁড়টিকে আমি নিয়মিত তদারকি করে খামারি কে রোগ প্রতিরোধ, কৃমিনাশক ওষুধ সেবনসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারনা দিয়েছি। ঈদের হাট আগ পর্যন্ত এ সিনবাদের ওজন আরো বাড়বে বলে দাবী করেন।

খামারীর বড় ছেলে সেলিম বলেন, সম্রাটকে আড়াই বছর লালন পালন করেছি।  সম্রাটকে দেখাশুনা করার জন্য আমরা বাড়ির ৪ মানুষ সব সময় দিয়েছি।  দিনে ২ বার ঠান্ড পানির সাথে সেম্পু  দিয়ে গোসল করাই।  ওর রাগ উঠলে সম্রাট বলে আদর করলে ঠান্ডা হয়ে যায়।  প্রচন্ড গরম থাকায় ২ টি ফ্যান ব্যাবহার করা হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাত পাখা দিয়ে ব্যাবহার করি।

সাড়ে ৪২ মন ওজনের সম্রাটের দাম চাচ্ছেন ২০ লক্ষ টাকা। আগ্রহী ক্রেতারা সরাসরি খামারির ছেলে সেলিমের মোবাইল নাম্বারে ০১৭৪০ ৮২০৮৪৭ যোগাযোগ করতে পারেন।

সম্রাট কে দেখার জন্য প্রতিদিনই ধামারাই, সাটুরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম ছাড়াও পার্শবতর্তী বিভিন্ন গ্রামের মানুষ দেখতে ভিড় করছেন নান্দেশ্বরী গ্রামের এম এ কুদ্দুছের বাড়ীতে।

পাশের হান্দুলিয়া গ্রামের ফরহাদ এসেছেন সম্রাটকে দেখার জন্য। ফরহাদ বলেন, আগে বিশ্বাস হয় নি, সাড়ে ৪২ মণ ওজনের ষাঁড় থাকতে পারে।  তাই দেখতে আসলাম।  ছবি তুলে আবার ফেসবুকে আপ করলাম।

সম্রাট কে সোমাবার সকালে (৬ আগষ্ট) গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষের ভিড়।  সম্রাট কে দেখছেন, ছবি তুলছেন, সেই সাথে ফোন দিয়ে স্বজনদের বলছেন সম্রাট কে দেখেছি এবং ছবি তুলেছি।
কাওলিপাড়া থেকে আসা সাজাদে বেগম বলেন, পোলাডা বল্ল ৪২ মণ ওজনের সাড় আছে নান্দেশ্বরী গ্রামে, তাই ভ্যানটলি রিাজার্ভ করে দেখতে আসলাম।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেনারি সার্জন ডা. মো. সেলিম জাহান বলেন, এম, এ কুদ্দুছের সাড়ে ৪২ মন ওজনের ষাঁড়টি ভাল দাম পাওয়া গেলে এলকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা গরু মোটাতাজা করার কাজে লাগতে পারবে।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ৭ আগষ্ট/ ২০১৮।
আরও পড়ুন:

সাটুরিয়ার সিনবাদের দাম হাকাচ্ছেন ১৮ লক্ষ

আরো পড়ুুন